রিফাত হত্যাকাণ্ড নিয়ে যা বললেন মন্ত্রীরা

বরগুনায় প্রকাশ্য দিবালোকে স্ত্রীর সামনে স্বামীকে হত্যার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সরকারের প্রভাবশালী চার মন্ত্রী। তারা বলেছেন, খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে সরকার অত্যন্ত কঠোর ও আন্তরিক।
রিফাত হত্যায় স্ত্রীকে দোষ দিয়ে আওয়ামী লীগ এমপির ফেসবুক পোস্ট!
আওয়ামী লীগ নেত্রী হত্যা, দুই কারণ খতিয়ে দেখছে পুলিশ
এর আগে, গতকাল বুধবার (২৬ জুন) বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে অনেক মানুষের উপস্থিতিতে স্ত্রীর সামনে স্বামী রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। খুনের ঘটনার ভিডিও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সকালে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে এর বিচার হতে হবে বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এরপর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী খুনিদের গ্রেপ্তারে নির্দেশ দিয়েছেন। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও খুনিদের গ্রেপ্তারে সরকার অত্যন্ত কঠোর বলে জানান। সবশেষ চট্টগ্রামে একটি অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ বসে নেই। দুজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী খুনিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন: সেতুমন্ত্রী সচিবালয়ে দেওয়া বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, বরগুনার খুনের ঘটনায় হত্যাকারীদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আন্তরিক চেষ্টা চালাচ্ছে। এক যুবককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন- যেভাবেই হোক দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। পুলিশ বিভাগ বিষয়টি নিয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

এটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির উদাহরণ কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনায় কি বলা যায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে? বরগুনা বলেন, রূপগঞ্জ বলেন, কোনও ঘটনাই রাজনৈতিক নয়, রাজনৈতিক কারণে আইনশৃঙ্খলার কোনও অবনতি ঘটেনি। এ ধরনের বিচ্ছিন্ন ঘটনা বিশ্বের যে কোনও দেশেই ঘটে। এমন কোনও দেশ পাবেন না যেখানে সামাজিক অস্থিরতা নেই। তবে পুলিশ ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখছে।

মন্ত্রী আরো বলেন, বরগুনায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে যুবক হত্যার ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। পুলিশ সোর্সে জানতে পেরেছি ইতোমধ্যে একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। যতদূর জেনেছি এটি প্রেমঘটিত, ব্যক্তিগত বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ। ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাকিদেরও গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চলছে।

রিফাত হত্যায় গ্রেপ্তার দুই, কাউকে ছাড় নয়: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে বরগুনায় স্ত্রীর সামনে স্বামী রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাটি দুঃখজনক। এর সঙ্গে জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না। সব অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হবে।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ বসে নেই। দুজনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ অপরাধীদের ধরতে কাজ শুরু করে দিয়েছে। ১০ বছর আগের পুলিশ আর এখনকার পুলিশের দক্ষতায় পার্থক্য আছে। ইতিমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে মন্ত্রী তাদের নাম উল্লেখ করেননি।

তবে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা সার্বিকভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি বলে মনে করেন না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

খুনিদের ধরতে সরকার অত্যন্ত কঠোর: তথ্যমন্ত্রী বরগুনায় স্ত্রীর সামনে হত্যাকাণ্ডের শিকার রিফাত শরীফের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে সরকার অত্যন্ত কঠোর বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বলেন, বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে রিফাত শরীফ নামে যুবককে তার স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত নিন্দনীয় বর্বরোচিত হামলা।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার এ খুনের ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর। ইতিমধ্যেই একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি অপরাধীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মন্ত্রী এ নৃশংস খুনের নিন্দা জানিয়ে বলেন, নিজের কাছে প্রশ্ন করেছিলাম আশেপাশের মানুষ কেন ছেলেটিকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি। তার স্ত্রী নিজের জীবনের কথা চিন্তা না করে, স্বামীর জীবন বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করেছে। সে প্রশংসার দাবিদার। আমি তাকে শ্রদ্ধা জানাই, সম্মান করি।

বরগুনার হত্যার গ্রেপ্তার এবং বিচার হবে, হতেই হবে: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আজ সকালে নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বরগুনার হত্যার গ্রেপ্তার এবং বিচার হবে, হতেই হবে।

তিনি বলেন, ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে বলে সবাই এটা নিয়ে কথা বলছেন। অবশ্যই ভালো। কিন্তু অন্য সবকিছু বাদ দিলাম। গতকাল (২৬ জুন) মোটামুটি একই সময়ে রাজশাহীর তানোরে বাজারে আম বিক্রি করতে গিয়ে একইভাবে নিহত হয়েছে আর একজন তরুণ, প্রকাশ্য দিবালোকেই হত্যা করেছে পাশের আর এক দোকানদারের ছেলে। নিহতের একটা রাজনৈতিক পরিচয়ও আছে, সে সেখানকার একটি ওয়ার্ডের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। না কোনও টেন্ডার নিয়ে বা বান্ধবী নিয়ে ফ্যাসাদ নয়। সংসার চালাতে নিজেই বাগানের আম বিক্রি করতে গিয়েছিল সেই হতভাগা তরুণ। সব মৃত্যুই আমাকে নাড়া দেয়। তরুণ-তরুণীর মৃত্যু একটু বেশি নাড়া দেয়। শিশুর মৃত্যু আরও বেশি নাড়া দেয়। আমরা বরগুনার মতো সবগুলোর ভিডিও দেখতে পাই না। গতকাল হয়তো এই দুইয়ের বাইরেও মানুষ খুন হয়েছে বা অপমৃত্যু হয়েছে। আমরা সবগুলোর খোঁজ রাখি না। তবে সচেতনতা সামাজিক সমস্যাগুলোকে কমিয়ে আনবে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যারা দেখছিলেন তারা মনে হয় না সাধারণ পথচারী বা ছাত্র। অবশ্যই তাদেরকেও আইনের আওতায় আনতে হবে। আমরা নিশ্চিত করবো প্রথমে গ্রেপ্তার তারপর ন্যায় বিচার। এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই।